আঁয় আঁয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা।
এই কবিতাটা ছোট বেলায় আমরা সবাই পড়েছি। কিন্তু ভয়ানক বিষয় হচ্ছে চাঁদ মামা আসবে তো নাই বরং আমাদের থেকে আরও দুরে সরে যাবে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন পৃথিবী থেকে প্রতিবছর দেড় ইঞ্চি করে দুরে সরে যাচ্ছে চাঁদ।
কিন্তু কেন? আর দুরে সরে গেলে আমাদের পরিনতি কী হবে?
চাঁদ কেন দুরে সরে যাচ্ছে তা বোঝার জন্য আমাদের খানিকটা পেছনে যেতে হবে।
আজ থেকে প্রায় সাড়ে চারশত কোটি বছর পূর্বে যখন পৃথিবীর মাত্র জন্ম হয়েছে তখন মঙ্গল গ্রহের সমান থিয়া নামের এক গ্রহ সাদৃশ্য বস্তু ধাঁক্কা দেয় পৃথিবীকে।
এই ধাঁক্কার ফলে থিয়া সম্পূর্ন ধ্বংস হয়ে গেলেও পৃথিবী থেকে বেশ কিছু অংশ ছিটকে বাহিরে চলে যায়।তবে পৃথিবীর মধ্যাকর্ষন বলের জন্য সেই অংশ বেশি দুরে যেতে পারে নি। বেশ কয়েক হাজার বছর পর সেই অংশগুলো এক সাথে জমাট বেঁধে পৃথিবীর চাঁরপাশে ঘুরতে থাকে। একেই আমরা চাঁদ বলে থাকি।
জন্মের পর পর চাঁদ পৃথিবীর সতেরো গুন কাছে ছিলো আর তখন পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য ছিলো ১২ ঘন্টা অর্থাৎ ৬ ঘন্টা দিন বাকি ৬ ঘন্টা রাত। ধীরে ধীরে চাঁদের সাথে পৃথিবীর আকর্ষণের ফলে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে।চাঁদ যখন পৃথিবীর চাঁরপাশে ঘুরতে থাকে তখন পৃথিবী ও চাঁদের পরষ্পর আকর্ষনের ফলে চাঁদে একপ্রকার কৌনিক ভরবেগ কাজ করে।ফলে পৃথিবীর আহ্নিক গতি কমতে থাকে আর চাঁদও পৃথিবী থেকে দুরে সরে যেতে থাকে।এই প্রকৃয়াটা সাড়ে চাঁরশত কোটি বছর আগে শুরু হলেও এখনো চলমান রয়েছে।
বিষয়টা একদম সহজ ভাষায় বলতে গেলে বর্তমান চাঁদ পৃথিবীর সমুদ্রের উপর প্রভাব ফেলে।ফলে আমরা জোয়ার ভাঁটা দেখতে পাই।
পৃথিবীর যে অংশে থাকে চাঁদ সে অংশের দিকে সমুদ্রের পানি ফুলে ওঠে। তবে যেহেতু পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর ঘুরছে তাই এই ফুলে ওঠা অংশটা ঠিক নিচ বরাবর থাকে না, কিছুটা সামনে থাকে। আর সামনের এই অংশের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে চাঁদ একটু একটু করে দুরে সরে যেতে থাকে। আর এই দুরে সরে যাওয়ার হার দেড় ইঞ্চি।
আর যখন পৃথিবীর দুই পাশে জোয়ার ভাঁটার জন্য পানি ফুলে ওঠে তখন এটি পৃথিবীর গতিকেও কমিয়ে দেয়।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিশতাব্দীতে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ে ১.০৯ মিলি সেকেন্ড।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, পৃথিবী থেকে চাঁদ দুরে সরে গেলে আমাদের কী হবে?
চাঁদ যখন পৃথিবী থেকে অনেক দুরে সরে যাবে তখন আর জোয়ার ভাঁটা হবে না। বলা যায় সমুদ্রের পানি স্থির থাকবে ফলে পৃথিবীর অনেক উপকূলীয় অঞ্চল হারিয়ে যাবে পানির নিচে।
শুধু তাই না পৃথিবীর নিজ অক্ষের উপর ২৩° কোণে ঘুরছে ফলে আমরা নিয়মিত ঋতু পরিবর্তন দেখতে পাই।আর চাঁদ পৃথিবীর এই ২৩°কোণকে স্থির রাখতে সাহায্য করে।ফলে চাঁদ যখন দুরে সরে যাবে তখন পৃথিবী এলোমেলোভাবে ঘুরতে থাকবে। যার ফলে পৃথিবীতে ভয়াবহ জলবায়ু বিপর্যয় দেখা যাবে।
বিষয়টা এমন হবে যে, সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গবে প্রচন্ড গরমে, দুপুরে থাকবে প্রচন্ড বৃষ্টি আর রাতে নামবে অস্বাভাবিক ঠান্ডা।
তবে এখুনি ভয়ের কোনো কারণ দেখছেনা বিজ্ঞানীরা কারণ বর্তমান হারেও চাঁদ দুরে সরে যেতে থাকলেও অন্তত পাঁচশো কোটি বছর লাগবে। চাঁদের পৃথিবী থেকে দুরে সরে যেতে।
রিপোর্টার জুনিয়র রব্বানী
স্মার্ট বাংলা
Comments
Post a Comment